সাক্ষী এই নীরবতার মুখোশ

একটি বিয়ে (আগষ্ট ২০১৯)

মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
মোট ভোট ১৩ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৪৫
  • ১৪
  • ৭৫
এক.
শীতের আড়মোড়া কেটে যেতে না যেতেই ফাগুনের একটা ভাব পরিবেশের ভিতরে বিরাজ করেছিল। স্বল্পাধিক কোকিলের কুহুকণ্ঠ তখন বুকের মধ্যখানে কামড় বসিয়ে দিতো। বাগানে বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করলো। ঠিক এমন দিনে বাসন্তী প্রেম বুকে জেগে আমি নীলাকে আপন করে নিই। ষোড়শী বয়সের সাধাসিধে একটা মেয়ে। পরীর মতো চেহারা, তবুও তাঁর বাবা তাঁর নাম পরী রাখে নাই। মাঝেমাঝে আমার আফসোস বেড়ে যেতো, পরী নামটা রাখলে কি এমন ক্ষতি হতো! মুখের দিকে চাইলে ঐ পূর্ণিমার চাঁদ যেন কপালে চলে আসতো। আর হাসি সে তো বাগানের ফুটন্ত গোলাপ। তাঁর বাবার নাকি নীল রঙ খুব পছন্দ ছিল। তাই নীলের সাথে মিলিয়ে মেয়ের নাম রেখেছিলেন নীলা। আমার প্রিয়পাত্রী, আদরের সোহাগিনী। ছোটবেলায় মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাই নীলা বাড়ির চৌকাঠ ছাড়া দূর কোথাও চিনে কিনা আমার জানা ছিল না। মায়ের হাত ধরে একটি মেয়ে পাড়ি দিতে পারে বহুদূর, কিন্তু বাবার হাত ধরে বহুদূর পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। কোথাও যেন পর্দার আড়াল পড়ে যায়। আমি তাকে কখনো অভিমানিত হতে দেখতাম না। আমারো বয়সটা একদম বেশি নয়। কাচা বয়সের একটি ছেলে মাত্র৷ দু'চোখে জমানো স্বপ্ন একদিন অনেক বড় হবো। একদিন অনেককিছু করবো। তাই বিয়ের কথাটা কল্পনাতেও আটকে রাখার চেষ্টা করিনি। ভার্সিটিতে থাকাকালীন বাবা আমার বিয়ের ব্যবস্থা সেড়ে ফেলেন, কারণ ভার্সিটিতে ছুটি থাকা অবস্থায়ও আমি বাড়ি ফিরতাম না। মা অনেক চিন্তা করতেন আমাকে নিয়ে। কিন্তু তারা আমাকে নিয়ে যতোটা চিন্তা করতেন, আমি একদম ততোটা ছিলাম না। জানি তবুও প্রত্যেক মা বাবা তাদের সন্তানদের নিয়ে একটু বেশিই চিন্তিত থাকেন।

দুই.
যদিও ভয়টা বেশ রকম ছিল, পারবো কি না সেই সুদূরপ্রান্তে পৌছতে.... কিন্তু সে কখনো বাঁধা দেয়নি। আমি নিশ্চিন্তে পেরুতে শুরু করছি। নীলার ভিতরে আমি কোন ধরণের আকাশচুম্বী দেখিনি, দেখিনি কোন রকমের ছলনাও। ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না, তবুও নীলা কোথায় যেন একটা বন্দীরত দেয়ালের ভিতরে আটকা পড়ে থাকে। আমি দেখি না। হয় তো আমাকে দেখারও সুযোগ দেয় না। কিংবা স্বার্থক নারীদের মতো সংসারের কোন দোষত্রুটি স্বামীকে বলে জগড়া বাঁধাতে একদম পছন্দ করে না। স্বামীর অধিকার নারীর ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করা, আমি তাতেও অপেক্ষা করি না। জিজ্ঞেসের অপেক্ষা থাকে মাত্র, দু'গাল মিষ্টি হাসি দিয়ে সব মুছে দেওয়ার সময় রাখে না। আমি কিছু বুঝে উঠার কিংবা সংসার থেকে কিছু খুঁজে বের করার তেমন কোন সুত্র পাই না। শুধু আমার বিবেক আমাকে ভাবায়- ছোটবেলা মাকে হারিয়ে কাছের সবচেয়ে প্রিয়জন ছিল বাবা। মেয়ের দিকে তাকিয়ে বাবা কখনো বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেননি। যদি না সতাই মায়ের তৃপ্ত ভালোবাসা না পায়। যদি না সতাই সম্পদের লোভে কিছু করে ফেলে। সবাই পেটের সন্তানের চিন্তা করে, খাবার না খেয়ে ঘুমালেও তাকে জাগিয়ে খানা খাওয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু পরের সন্তান দু'বেলা না খেয়ে থাকলেও তাঁর খোঁজ নেয় না। হয় তো জনসম্মুখে মুখ রাখার জন্য সতাই মা বলতে পারেন, বেচারা কোথায়- দু'বেলা ভাত খায়নি! মনে হয় সে মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। বাবার হাতের খাওয়ানো ছাড়া যে মেয়েটি নিজ হাতে ভাত খেতো না, সে মেয়েটিও আজ নিজ হাতে খেতে হয়, রান্না করতে হয়.... বলতে গেলে সংসারের পুরো কাজ তাঁর দ্বারা সামলাতে হয়। হয় তো বাবার সে স্মৃতিগুলো তুলে এনে উষ্ণ বাতাসের সাথে নিজেকে ভিজায়, একাকীত্বে খুব পোড়ায়! এতোটুকু ভেবে আমিও নিশ্চুপ হয়ে যেতাম।

তিন.
অনেকদিন হয়েছে বাড়ি ফিরি না। পরীক্ষার পড়া নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকি। অন্ধকারের এ শহরে রাত বাড়ে; চাঁদ, তারা নির্বাক তাকিয়ে থাকে... কোথাও ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে মনটা খুব ছোট হয়ে যায়। মোটেও ভালো লাগে না। কেমন যেন একাকীত্বের ভীষণ কষ্টটা আমাকে পোড়াতে থাকে। আর আমি খুব পুড়ি। এভাবে দিন বাড়ে, আর রাত আপন গতিতে চলতে থাকে। কিন্তু সেই রাতের অবাধ্য অভিমানগুলো আর কমতে থাকে না। দ্বিধাহীন ঝড় তোলে যেন। অতঃপর পরীক্ষা শেষ হলে সেদিনই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। অনেকটা পথ পেরিয়ে যখন বাড়িতে উপস্থিত হই তখন আর কাউকে সেই আগের মতো দেখি না। সেই আগের মতো কেউ আর কাছে আসে না। দূর থেকেই পাখিকে ঢিল মেরে, সবাই দূরে পালিয়ে যায় কেউ কাছে আসে না। আগে বাড়িতে যাওয়ার অপেক্ষা মাত্র, সবাইকে দেখতাম কাছে আসতো, ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করতো, সুখদুঃখের কথা বলতো৷ অথচ এখন আর সেই কথাগুলো কেউ জিজ্ঞেস করে না। বলে না কেমন আছিস! বুঝে উঠতে পারিনি এতোটুকু অভিমান কিসের? মাকে খুঁজতে গিয়ে না পেয়ে নিজের রুমে ঢুকে গিয়ে দেখি নীলা কান্নাভেজা চোখ নিয়ে বসে আছে। অথচ তখন আমার বুকে বুকভরা আনন্দ, মুখভর্তি হাসি। আমি হতভম্ব হয়ে পড়লাম। কারো কান্নাভেজা চোখের সামনে কেউ মুখভর্তি হাসি রাখতে পারে না। আমাকে দেখে আমি না দেখার মতো করে নীলা চোখ দু'টো মুছে নিলো। তবে আমিও কি সেদিন পাগল ছিলাম, জানিনা। কয়েকটা কথার ফাঁক গলে চোখে জল, তবুও মুখে হাসি।

-) নীলা কি হয়েছে কাঁদছো কেন?
-) কই কিছু না...
-) কিছু না মানে? সত্যি করে বলো...
-) শরীরটা ভালো নেই...

শরীর বেশ ঠিক আছে। কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না, শুধু তাঁর জলে ভেজা দু'চোখ ছাড়া। প্রশ্ন করলে মিষ্টি একগাল হাসি দিয়ে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন করার ইচ্ছেটা ভুলে দেয়। নিজেকে শুধু প্রশ্ন করি, আমি কেন এমন? সেদিন অনেক জার্নি ছিল, তবুও দু'চোখে ঘুম ছিল না। সারাটা রাত নির্ঘুমে কেটে গেল। যে রাত চাঁদনির আলো থাকা সত্যেও কিছু অন্ধকারময় কারাগারের কথা তোলে আনে সেই রাত কি আর ভালোবাসার কথা বলে, মনে হয় না। ভালোবাসা সে তো সুদিনের অতিথি।
-) সকালে হাটতে বের হলে দেখা বড় চাচির সাথে৷ কয়েকটা প্রশ্ন জুড়িয়ে দেওয়ার পর বলল- বউটা কি এখনো আছে নাকি চলে গেছে? আমি নিশ্চুপ থাকলাম, যদিও বুকের ভিতর হঠাৎ কামড় দিয়ে উঠলো। পরে চাচি নিজের মুখে থেকে কয়েকটা ইংগিত ছুঁড়ে মারলো। রাহুল জানো- ভালোবাসারও কয়েকটা প্রক্ষেপণ থাকে; সবসময় চোখে চোখে রাখিও, খুঁজ খবর নিও। যে অবস্থা দেখছি, এ অবস্থায় কেউ ভালো থাকতে পারে কি না আমার ভাবনায় আসে না। আমি শুনে অবাক হলাম। এইদিকে আবার অনেকদিন ধরে চাচির সাথে আমাদের সংসারে মায়ের সাথে একটা গোলযোগ হচ্ছিল। ভাবলাম, নাকি চাচি ভালো ভালো কথা বলে আমাকে সংসার ত্যাগ করানোর কথা ভাবছেন। তখনো আমি বুঝে উঠতে পারিনি....।।

চার.
একদিন বাড়ি থেকে রাগ করে চলে আসলাম। কিছু ভালো লাগে না। সময়গুলো যেন সেই আগের মতো কাটছে না। আগের মতো আড্ডাতেও এখন আর মন বসে না। সারাটা দিন কেমন যেন আনমনাভাবে কেটে যায়। তবুও চাকুরীর পড়া নিয়ে নিজেকে পড়ার টেবিলে একটু বসাতে হয়।
-) দীর্ঘদিন পর পরীক্ষার ফলাফল হাতে এসে পৌছালো। চমৎকার একটা রেজাল্ট ছিল। ভাবলাম বিয়ে হয়ে গেছে, এখন প্রয়োজন একটা চাকুরীর। চাকুরীটা হোক, না হয় পরে মাস্টার্স শেষ করবো। বাড়িতেও অনেকদিন হয়েছে যাওয়া হয় না৷ জানিনা আব্বা আম্মা কেমন আছেন। বাবাকে একটু অসুস্থই দেখে এসেছি, জানিনা ভালো হয়েছেন কি না। জানিনা ছোট বোন রেণুর কি অবস্থা। নীলার কথাও খুব মনে পড়ে৷ ইচ্ছে করে কয়েকদিনের জন্য বাড়ি ফিরি। কিন্তু পরিবারের গোমড়ামুখ আমাকে খুব বিষণ্নতায় ফেলে দেয়। ভাবায় হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার পিছনের ঘটনা। কারো মুখ থেকে সেই অভাবনীয় ঘটনার কোন বাক্য খুঁজে পাইনি৷ না বলল নীলা, না বলল ছোট বোন রেণু। মা'কেও কেমন যেন পরিবর্তন হতে দেখা যায়! এতোটাই যদি পরিবর্তন হবে, তবে আমাকে বিয়ে করানোর কি দরকার ছিল!? আমি তো নিজের থেকে করিনি, করতেও বলিনি। তবে তাদের ইচ্ছের বাহিরে কেন আজ আমি!? এসব ভাবনার উপরে সারাটা দিন কেটে যায়।
-) ভাবনার শহরে আর হাবুডুবু খেতে ইচ্ছে করছে না, তাই একদিন কাউকে না জানিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অনেকখানি পথ পাড়ি দিয়ে বাড়িতে পৌছতে শরীরটা আর ভালো ছিল না। তবুও মুখে কিছুটা আনন্দ ছিল এই ভেবে যে, পুরনো সবকিছু এখন অতীত হয়ে গেছে৷ হয় তো তারা ভুলে গেছে সেসব।
বিকেল ঘনিয়ে এলে পা রাখি বাড়ির চৌকাঠে। বরাবরের মতোই কেউ কিছু বলছে না। কারো মুখ থেকে বিন্দুমাত্র শব্দ বের হচ্ছে না। রেণুকে ভালমন্দ জিজ্ঞেস করলাম, মাকে জিজ্ঞেস করলাম...কেউ সাড়া দিচ্ছেন না। বাড়ির কেউ ভয়ে কিছু বলতেও চাচ্ছেন না। বাবাকে জিজ্ঞেস করতে যাবো, দেখি বাবা খুব অসুস্থ। তাই প্রশ্নটা গুলিয়ে ফেললাম। ব্যাগ ছিটকে মেরে সোজা নিজের রুমে ঢুকে পড়লাম। দেখি নীলা কান্নাভেজা চোখে শুয়ে আছে। আর কেমন যেন গভীর নিশ্বাস ফেলছে। বুঝতে আর বাকী রইলো না, হয় তো কিছু হয়েছে। প্রশ্ন করলাম, উত্তর শূন্যতা.....কিছু হয়নি। না বললে কি আর নয় হয়ে যায়। নিশ্চিত কিছুটা ঘটেছে। সেদিন আঁচড়ে পড়া দুশ্চিন্তায় সারাটা রাত কেটে গেল। কোন ঘুম ছিল না চোখে। নীলাকেও ইদানীং সেই আগের মতো দেখা যাচ্ছে না৷ চেনা যাচ্ছে না, সে আমার স্ত্রী। কেমন যেন শরীরটা শুকিয়ে যাচ্ছে। তারকাছে আজকাল নীরবতাও অনেকখানি হার মেনে যায়। কিছু বলতে চাইলেও টুপটুপ দু'চোখের পানি পুরোটা মুখ ভিজে নীরবতাকে সাক্ষী করে নেয়!
অতঃপর স্নিগ্ধ সকাল পেরিয়ে গেলে বাবাকে ডেকে সামনের রুমে নিয়ে আসলাম। উপস্থিত ছিল মা, রেণু, নীলা ও বাড়ির আরো কয়েকজন৷ প্রশ্ন না সুধাতেই, মা বলে ফেললেন- নীলাকে তালাক দিতে! কথাটি শুনতে মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়লো। খুব ক্ষান্ত হলাম। কেন? বলতেই- মা আর রেণু আমাকে কয়েকটা নীল ডাইরির প্রতিটা শব্দ, বাক্য উপহার দিল। সেখান থেকে চলে আসলাম। আর কিছু না বলে নিশ্চুপ নীরবতার সাথে কতক্ষণ জোয়ার ভাটার যুদ্ধ করলাম। তবুও সমাধান আসেনি। এদিকে বাড়ির লোক মায়ের ভয়ে কিছু বলতে চাচ্ছেন না। আবার নীলার পাক্ষিক লোকেরা বলে নীলার কোন দোষ নেই, তাও গোপনে৷ আবার যারা কোন পাক্ষিক নয়, তারাও বলেন নীলা নির্দোষ। তবে কি অল্প কিছুতেই কেউ কারো প্রতি আঘাত করতে পারে? তাও আবার মনে হচ্ছে না। নিশ্চয়ই কোন অপরাধ ছিল। প্রতিটা তালাকের পিছনে একটা সুস্পষ্ট ঘটনা থাকে। যদিও মা বাবার কথাই স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ইসলামে জায়েজ আছে। কিন্তু মা বাবাকে হতে হবে ফরযদারী এবং তালাকের পিছনের ঘটনা হতে হবে সত্যতা প্রমাণিত। নির্দোষ কিংবা সত্যতা প্রমাণ ছাড়া কাউকে তালাক দেওয়া যায় না।
-)আবার হঠাৎ তালাক দেওয়ার কথাই বা মা কেন বলবেন...।
আবার ভাবি ষোড়শী বয়সের একটি মেয়ে কতোটুকুই বা সাংসারিক ধারণা আছে? সংসার সম্পর্কে জ্ঞান আছে? যে মেয়েটির আকাশটা ছিল সবসময় গাঢ় অন্ধকারময়ী, স্বপ্নগুলো ছিল উষ্ণ বাতাস। মা'কে হারিয়ে, বাবাকে রেখে পাড়ি দিয়েছে স্বামী নামক যন্ত্রণার আরেকটা শহরে। সেই বৃদ্ধ বাবারও কিঞ্চিৎ খোঁজ নেই। তবে সেই ষোড়শী বয়সী মেয়েটির ভুল হতেই পারে। তারা তো জানতেন মেয়ের বয়স কম, তবে কেন এনেছিলে? যদি সংসার না শিখিয়ে নিতে পারবে, তবে ছেলের বউ হিসেবেই কেনই বা এনেছিল? কি দরকার ছিল ষোড়শী বয়সী মেয়েটির জেগে উঠা দুর্দান্ত স্বপ্নকে মুহূর্তে ভেঙ্গে ছাড়কার করে দিলো মাটির সাথে?
এসব ভাবতে ভাবতে সময়টা পেরিয়ে যায়। সময়টা পার হতে লাগলেও প্রতিটা সময় নীলাকে তালাক দেওয়ার কথা বলতে একদম ভুল হয় না.... অতঃপর এ কথা শুনতে এতোটাই বিরক্তি হয়েছি যে, কাউকে না বলে না জানিয়ে আবারো রাগ করে বের হয়ে গেছি....! ভাবলাম এইসব ক্ষণিক মাত্র, সব ঠিক হয়ে যাবে।

পাঁচ.
আজকাল সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ে বুকের উপর। অনেকখানি অভিমান নিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হয়। কিছু ভালো লাগে না। এই জমাট বাঁধা শহরে কোনকিছুর অভাব হয় না, তবুও নিজেকে কেমন যেন একা একা অনুভব হয়। যেন নিঃসঙ্গতার শহরে বড্ড হাবুডুবু খাচ্ছি। অতোটা ভাবনা আর কখনো গ্রাস করতে পারেনি আমাকে।
-) কষ্টটা একটু অন্যরকম ছিল। যদিও দিগন্তস্পর্ষী কষ্ট, কিন্তু পড়ালেখা থেকে ফারাক হতে পারিনি। চাকরীর জন্য বেশ পড়ালেখা চলছিল। এভাবে বেশ কয়েকটা মাস পেরিয়ে গেলে সরকারী একটা চাকরীতে ইন্টারভিউ দিই। তাঁর কয়েকদিন পরে ভাইবার জন্য মেসেজ আসে। অতঃপর ভাইবাও দেওয়া শেষ। সেই চাকরীর এপার্টমেন্ট লেটার যখন হাতে এসে পৌঁছে, ঠিক তখনি বুক ভরা আনন্দ, মুখ ভরা হাসি আর ব্যাগ ভরা মিষ্টি নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম। মাকে দেখি অনেকখানি অভিমান নিয়ে বসে আছেন, আর বাবাকে দেখি বিছানায় শুয়ে নির্ভীক তাকিয়ে আছেন। কেমন আছেন বলতেই বাবার দুচোখ থেকে গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে জল। মাকে জিগ্যেস করলে কোন উত্তর খুঁজে পাইনি। রেণু দেখি অনেকদূর থেকে তাকিয়ে আছে...! জানিনা এই নীরবাতার মুখোশে কি লুকিয়ে আছে! নিজের চাকরী হল- আনন্দের কথা, অথচ সবাইকে দেখি নিশ্চুপ! একসময় বাড়িতে আসলে বাড়ির সবাই ছুটে আসতো, অথচ এখন আর কাউকে দেখছি না। অতঃপর নিজেও বুকভরা অভিমান আর চোখভরা জল নিয়ে নীলার রুমের দিকে দৌড় দিই। সেখানে আর নীলার দেখা পাইনি। শুধু একটা ডাইরির ভিতরে তাঁর সাক্ষরসহ ছোট একটা চিরকুট খুঁজে পেলাম-
আমি নীলা। তালাক নামের ঘৃণিত শব্দের চেয়ে নিজেই আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিলাম! ভালো থেকো রাহুল, যেভাবে আমি তোমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছিলাম।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রঙ পেন্সিল অভিনন্দন!
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
অনেক ধন্যবাদ।।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
Jamal Uddin Ahmed এবং জয়মাল্য আপনার গলে। অভিনন্দন।
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা দাদু।।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
মাইনুল ইসলাম আলিফ অনেক অনেক অভিনন্দন ভাই।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
অনেক ধন্যবাদ ভাইজান।।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত ভাই খুব খুব খুশি হয়েছি । অভিনন্দন সহ শুভকামনা রইল ।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা দাদাভাই
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
জুলফিকার নোমান অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ভাইজান।।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
Fahmida Bari Bipu এ কী কাণ্ড! তুমি দেখি গল্পেও প্রথম হয়ে বসে আছো! অনেক অনেক অভিনন্দন নুরে আলম। এগিয়ে যাও...
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আমি নিজেও অবাক হয়ে গেছি। আসলে তিনটি বছরের চেষ্টার ফল এটাই মনে হচ্ছে। সেই সতর সাল থেকে গল্প লেখার চেষ্টা করে আসছি। আলহামদুলিল্লাহ, বিজয় দেখে খুব আনন্দিত হলাম। কৃতজ্ঞতা আপা।।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
তুমি পরিশ্রমী মানুষ। এমন মানুষের গলাতেই জয়মাল্য শোভা পায় :)
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
Jamal Uddin Ahmed কবিবর, গল্পে ভালই এগুচ্ছেন দেখে ভাল লাগল। আরোও ভাল গল্প পড়ার আশায় রইলাম। অনেক শুভ কামনা।
কৃতজ্ঞতা দাদুভাই
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
রঙ পেন্সিল কবিদের লেখা গল্পে অন্যরকম একটা দারুন ব্যাপার থাকে। খুব ভাল লেগেছে। শুভকামনা।
অনেক কৃতজ্ঞতা জানবেন কবি।।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
মাইনুল ইসলাম আলিফ শেষটা দারুণ হয়েছে।ছোট গল্পের মতোই এন্ডিং ।ভো্ট রইলো।আসবেন ভাই আমার তিথির বিয়ে গল্পটা পড়তে।আমার গল্পটা নিয়ে আমি খুবই রোমাঞ্চিত।প্লিজ পড়বেন।
অনেক ধন্যবাদ আলিফ ভাই
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী অনেক ধন্যবাদ দিদি। আসলে গল্প লিখতে জানিনা। এই যে আপনাদেরগুলো পড়ে একটু লেখার চেষ্টা করি মাত্র।। সামনে যাতে আরো এগুতে পারি আর্শিবাদ করবেন।।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একটি বিয়ে বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে সে মেয়েটিকে আপন করে সারাজীবন কাছে রাখা। সুখেদুঃখে, হাসিকান্নায় পাশে রাখা। মনের মতো করে যত পারা ভালোবাসা। সুখদুঃখের কথা শেয়ার করা। তারচেয়ে বড় কথা হল যে সংসারে এসে মেয়েটি ঠাই নিবে সে সংসারের জননী যেন তাকে তাঁর মেয়ের মতো জানা, দেখা। প্রতিটা শাশুড়ি চায় না তাঁর ছেলের বউ খারাপ হোক, খারাপ পথে যাক, কারো সাথে আড্ডা হোক। তাই সবসময় শাসনবারণের ভিতরে রাখে। শাসনটা যেন একটু কম হয়। কিন্তু সীমার বাহিরে চলে গেলে তা আর কারো সহ্য হয় না। সে যেমনি হোক না কেন। শাশুড়ি হয় তো ভুলে যান- সেও একদিন অন্যের সংসারের বউ ছিলেন, অন্যের সংসারটা তাঁর হাতের গোছানো ছিল। কিন্তু তা না ভেবে তিনি সেই সংসারের শাশুড়ি যেভাবে তাঁর সাথে আচরণ করেছেন, ঠিক তাঁর সংসারেও তাঁর ছেলের বউয়ের সাথে তিনি সে আচরণ করতে বসে থাকেন। আর আমার "সাক্ষী এই নীরবতার মুখোশ" গল্পটিতেও রাহুলের মায়ের কুআচরনের কারণ তোলে আনা হয়েছে। নীলাকে এতোটাই শাসন করেছিল যে সে একসময় সহ্য করে থাকতে না পেরে এবং রাহুলকে তাঁর মায়ের বারবার বলা তালাক নামের শব্দটি নীলাকে বিভ্রান্ত করে ফেলেছে। নীলা ভাবলো- তালাক নামের এ অপমানিত শব্দের চেয়ে আত্মহত্যার পথটাই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ বলে মনে হল। তাই সাক্ষী হিসেবে নিজের হাতের সাক্ষরসহ ছোট একটি চিরকুট রেখে গেলো। সুতরাং আমার "সাক্ষী এই নীরবতার মুখোশ" গল্পটি বিবেচনা করলে "একটি বিয়ে" বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যতা পাবে বলে আমার বিশ্বাস।

২২ ডিসেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৬৯ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৪৫

বিচারক স্কোরঃ ৩.৫ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ১.৯৫ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪